নব আদিত্যর দেখা

একটি নতুন সূর্য (ডিসেম্বর ২০২৩)

রবিউল ইসলাম
  • 0
  • ১১৪
বিয়ে ঠিক হয়েছে । কথা পাকাপাকি; ফাল্গুনের ১৩ তারিখে বিবাহ। একটা বিরহের সূর আমাকে ক্রমশ দূর্বল করে তুলছে । ছেলে জার্মান থাকে, অনেক প্রভাবশালী পরিবার তাদের। নাম তার "অভি চৌধুরী"। কিন্তু আমার মন যে দিয়েছি এক পাষান মনের মানুষকে । যে মানুষটি আমাকে বুঝে না । আমার বান্ধবীদের কতো সাহায্য করতে বলেছি যাতে তারা আমার আর পলাশের সম্পর্কটা ঠিক করে দিতে পারে । কিন্তু তারা সবসময় আমার সুখের সময় নজর লাগায়, দুঃখের সময় লবণ লাগায়।

যাই হোক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, "আজ রাতে তার বাড়িতে গিয়ে ওঠে বসব।" সমালোচনা হোক আর যাই হোক তবুও তাকে আমার করবই করব। রাত তখন প্রায় দেরটা বাজে, বাইরে শুধু নিস্তব্ধতা । উঠোনে আমি
নাচলেও কাকপক্ষিতে টের পাবে না । একটি ব্যাগে তিন সিট কাপর, আমার কিছু গয়না, আর জমানো কিছু টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি । উঠানে আসতে না আসতেই ছোট কাকা তার ঘর খুলল হাতে লাঠি। চমকে উঠলাম; দেখলাম তিনি বিড়াল তারালো আর ঘরে আবার খিল দিলো। ভাগ্যিস আমাকে দেখে নায়।
আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী । ছেলের বাড়ি রাঙামাটি সেইম ইয়ারে পড়ে । আমি কোনদিন এতো দূরে একা যায়নি । তারমধ্য পলাশের বাড়ি ও চিনিনা । বান্ধবীদের থেকে ঠিকানাটা জেনেছি ।
মনে সাহস নিয়ে টাংগাইলের উদ্দেশ্য রওনা হলাম ঔখান থেকে চট্টগ্রামের ট্রেনের টিকিট কেটে রওনা দিবো ।
কিন্তু গ্রামে বাড়ি হওয়ার কারনে রাস্তায় কোন গাড়ি নেই।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একটা সিএনজি এলো কিন্তু লোকটা সুভিদার মনে হলো না । লোকটি
বলল, " রাতে সুন্দরী কার মন জমাতে গেছিলেন? আশে পাশে চোখ ঘুরান আমরা ও তো আছি , পছন্দ হয়না নাকি ?"
করুন দৃষ্টিতে তাকে বললাম, " ভাইয়া আমার দাদী মারা গেছে বাড়ি টাংগাইলে একটু সাহায্য করুন" এইবলে ন্যাকা কান্না শুরু করলাম। লোকটি আমাকে ভালো ভাবে টাংগাইলে নিয়ে গেল। ভোর ৬ টার একটা টিকেট কাটলাম আর কাউন্টারের এক পাশে বসে রইলাম। একটা মহিলা বড় একখানা ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর তার পাশে আছে সুন্দর এক ছেলে । ছেলেটাকে দেখে ভালো লাগলো বয়স পঁচিশ হবে হয়তো । ট্রেনে ওঠার পর আমি কোন সিট পেলাম না তাই ভাবলাম দাঁড়িয়েই যাব। হঠাৎ দেখি ঔ মহিলাটি আমাকে ডাকতেছে আর বলতেছে, "আসো মা আমার সাথে বসো আমি ব্যাগটি নিচে রাখি। " আমি গিয়ে বসলাম। তিনি বলল
- কোথায় যাচ্ছো মা ?
- বন্ধবীর বাড়ি । বান্ধবীর বিয়ে তারজন্য ।

আমি বারে বারে ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছিলাম। কিন্তু ছেলেটি একটি বারো আমার দিকে তাকালো না ।
মহিলাটি তার ব্যাগ খুলে একটি ছবি বের করলো আর বললো ছবিটি তার মেয়ের। আজ ছয় বছর ধরে
হারিয়েছে । আর তখন ছেলে টি বলল, "মা তুমি ও যেনা ! অচেনা মানুষকে এতো কিছু বলতে হবে না ।"
তখন তার মেয়ে র কথা বললো, " আমার মেয়ে এক ছেলেকে পছন্দ করতো । ছেলেটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আমার স্বামী ছেলের পারিবারিক অবস্থা দেখে প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেছিলেন। তারপর একদিন সকালে শুধু একটা চিঠি লিখে মেয়ে আমার চলে যায়।" কেমন আছে , কী করছে কিছু জানিনা । শুধু যানি সুখী আছে ।

--- ঘটনা শুনার পর আমার মনে হলো আমি এমন করছি কেন? আমি কী সুখী হতে পারব? অযথা পলাশের জীবন নষ্ট করব। আমার তখন ভীষণ ঘৃনা লাগল নিজের উপর।
আমার বাবা - মা তারাও চায় আমি সুখী হই। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। আর মহিলাটির কথা গুলি নতুন সূর্যের আলোর মতো আমাকে পথ দেখালো ।
মহিলা টি বলল,
-কাঁদছো কেন?
-এমনি । ভালো লাগছে না ।
- মায়ের কথা মনে পড়ছে বুঝি তোমার?
- হুমম অনেক।
তখন মহিলাটি আবার ব্যাগ খুলল। এখন বের করল তার মেয়ের জন্য রেখে দেওয়া বিয়ের সমস্ত জিনিস।
আর বলল তার মেয়ের স্মৃতির জন্য সে এগুলি সাথে নিয়ে ঘুরে । শাড়ি টা আমার গায়ে লাগিয়ে বলল, " একদম রাজরানীর মতো লাগছে । "
তারপর আমি ভাবললাম সামনের স্টেশনে নেমে বাড়ি ফিরে যাবো । কান্না করার কারনে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছি । ঘুম ভাঙ্গার পর নাকে একটা মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ আসছিল। দেখলাম আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে একজন। আর মাথাটা তার বুকের মধ্যে । মাথা টা উঁচু করে তাকিয়ে দেখি আন্টির ছেলে । আমি চমকে গিয়ে বলছি ! ছি ! আপনি এইভাবে আমাকে ধরে আছেন কেন? তখন আন্টি বললো, " হবু স্ত্রী কে স্পর্শ করলে কিছু হয়না । আজ বাদে কাল তো আমার ঘরেই যাবে ।"
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। বললাম ওনার নাম কি ?
তিনি বলল অভি চৌ ধুরী ।
আমি ক্ষনিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
আমি বললাম আপনারা জানলেন কেমনে আমি পালিয়েছি ?
আন্টি বললো , " তোমার ছোট চাচা সব বলে সেরাতে । আর অভির বায়না ছিলো তোমাকে সারপ্রাইজ করার সে জন্য আমরা এসেছি ।" অভির মুখে তখন আমি একটা মিষ্টি হাসির ঝলক দেখলাম। ইসস!! কত সুন্দর অভিনয় করতে পারে ।
নতুন সূর্যের আলোতে যেমন পৃথিবী নব জীবন্ত হয়ে ওঠে ।
আমার জীবনে সেই নতুন সূর্য হলো অভি চৌধুরী ।
যে আমাকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে , ভালোবাসতে শিখিয়েছে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অথই মিষ্টি সুন্দর হয়েছে
ধন্যবাদ মিষ্টি
ফয়জুল মহী চমৎকার লিখেছেন খুব ভালো বলেছেন।
ধন্যবাদ স্যার।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বিয়ে ঠিক হয়েছে । কথা পাকাপাকি; ফাল্গুনের ১৩ তারিখে বিবাহ।

২০ অক্টোবর - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "সংসার”
কবিতার বিষয় "সংসার”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৫